আমি বাবা

বাবা (জুন ২০১২)

কামরুল হাছান মাসুক
  • ৩২
  • 0
আমি বাবা, ছেলের জন্য
কষ্টে বুক ফেঁটে হয়ে যায় ঝর্ণাধারা।
ছেলেটা আজ কতদিন ধরে নিঁেখাজ
কেউ দিতে পারছে না কোন খোঁজ।
ছেলেটার কি দোষ
যাকে করা হয়েছে হত্যা নয়ত গুম।
রাজনৈতিক কারণে নাকি
সরকারের বিপক্ষে অবস্থানের ফলে।
নাকি ব্যক্তিগত রুষে
দলীয় কোন কোন্দলে।
নাকি ভাল মানুষ হিসেবে
সমাজের সেবা করবে বলে।
সবার শ্রদ্ধা-ভালবাসা, মায়া-মমতা
একাই তুলে নিবে বলে।
বর্জ কন্ঠে আওয়াজ তুলবে বলে
বাঁজহাই গলায় জনগণের অধিকার নিয়ে
চিৎকার চেচঁ ামেচি করবে বলে।
আমি বাবা, ছেলের জন্য মন প্রাণহারা।
সবার দরঘাই যাই
ছেলে বেঁচে আছে কিনা এরকম শুভ সংবাদ, আশ্বাস
শুনতে চাই।
যাকে বলি, সেই বলে হত্যা নয়ত গুম
ছেলের আশা ছেড়ে দিয়ে রুহের মাগফিরাত করুন।
বুকের কষ্ট, বুকের পাথর
ফেলে দিয়ে কাজ কর্মে নেমে পড়নু ।
স্বাভাবিক জীবন যাপন করুন
সবার সাথে তাল মিলিয়ে চলেতে শিখুন।
অতীত স্মৃতি মনে করুন
দরকার হলে দু ফোঁটা অশ্রু ফেলুন
আবার সাথে সাথে রুমাল দিয়ে মুছেও ফেলুন।
মিলাদ-মাহফিল করুন।
বছরে বছরে রুহের মাগফিরাতের জন্য অর্থ-কড়ি ঢালুন।
আতড়বীয়-স্বজনদের নিয়ে জলসায় বসুন।
ছেলের গুণকীর্তন করুন।
এখন বড় হলে কত বয়স, কি করত
তার হিসাব-নিকাশ করুন
বিভিনড়বভাবে মিলাতে চেষ্টা করুন।
আমি বাবা, আমি তার্জব বনে যাই
যখন শুনি কেউ হয়েছে গুম, নিখোঁজ।
আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সরকার
দিতে পারছে না কোন খোঁজ।
জনগণ এত কাড়ি কাড়ি
অর্থ ঢেলে পোষসে অকর্ম, অর্থহীন এবং অযোগ্য কোন লোক।
তীব্র প্রতিবাদ জানাই
নিন্দা জানাই নিরাপত্তা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা লোকদের।
যারা এক লক্ষ সাতচলি্#৮৭২২;শ হাজার বর্গমাইলের লোকদের নিরাপত্তা
দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ ।
তাদের না আছে ইচ্ছা-শক্তি-মনোবল।
তারা সবসময়ই সরকারী দল।
জনগণকে নিরাপত্তা না দিতে পারলে ক্ষমতা ছাড়ুন
আমাদের মুক্তি দেন, আপনারাও মুক্তি নেন।
সবাইকে একটু স্বাধীনভাবে চলতে দেন।
মতামত প্রকাশ করার অধিকার দেন।
আমি বাবা, মনে পড়ে ছেলের ছোটবেলার মায়াবী চেহারা।
যে ভাল-ভাল খাবার, পোষাক-পরিচ্ছেদ চেয়েছিল।
কয়েকটা কয়েন, কিছু উপহারও পেয়েছিল।
যা পেয়ে খুশিতে বলেছিল বাবা, বাবা।
অভাবের তাড়নায় কিছুই দিতে পারেনি
না ভাল খাবার, না কিছু দামি উপহার ।
তখন ছেলে বলেছিল বাবা থাক
তোমার কষ্ট হলে আমার লাগবে না কোন কিছু, কোন উপহার।
পরিণত বয়সে নিজে কষ্ট করে উপার্জন করেছে
সংগ্রাম করে নিজের অবস্থান তৈরি করেছে।
সংসারের হাল ধরেছে, পারিবারিক অবস্থার উনড়বতি ঘটিয়েছে।
বাবা-মা, আতড়বীয়-স্বজনদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে।
দেশবাসীর কাছে সুনাম অর্জন করেছে।
যেটা আমি করতে পারিনি, সেটা সে করে দেখিয়েছে।
একটা মেয়েকে ভালভেসে প্রেম-রোমান্সও করেছে।
আদর-মায়া-মমতা দিয়ে কাছেও টেনেছে।
জীবন সঙ্গীনি করবে এ রকম আশ্বাসও দিয়েছে।
পরিবার, আতড়বীয়-স্বজনদের সম্মতিও পেয়েছে।
বিয়ের দিন-ক্ষণ-তারিখও ধার্য হয়েছে।
শুধু ধার্য হয়নি ছেলের ফিরে আসা
বিয়ের পিঁড়িতে আসন পেতে বসা।
রুমাল দিয়ে মুখ ঢেকে
রুমালের ফাঁক দিয়ে হাসা।
এরকম মধুরয়েন সমাপয়েৎ দিনে আসা হয়নি
হয়েছে পত্রিকায় হেডলাইন, সংবাদ।
আজ পঞ্চম বছর, যে কোন সময়ই
মনে হয় ছেলেটা এই বুঝি আসল এখন
বাবা বলে ডাকবে তখন
জড়িয়ে ধরে কাঁদবে আমার বাচাঁধন।
এতদিন কোথায় ছিলে বাবা তুমি আমাদের ছেড়ে
কে তোমাকে নিয়ে গেছে।
কি কারণে নিয়ে গেছে।
বল, বল আমায়।
তোমার জন্য কেঁদে কেঁদে হয়ে যাই
দিশেহারা, পাগলপারা।
না বাবা, কিছুই হয়নি।
কয়েকদিন আটকে রাখতে চেয়েছিল
কণ্ঠ রুদ্র করতে চেয়েছিল।
ভয়-ভীতি দেখাতে চেয়েছিল।
যাই হোক চিনত্দা করো না বাবা
তোমাদের কাছেই ফিরে আসবে তোমার
আদরের ছেলেটা।
এ সবই একজন বাবার কল্পনা।
ছেলেটা নিখোঁজ এটাই বাসত্দবতা।
আজ দশটি বছর
হারানো ছেলের কথা ভূলে গেছে সকল আতড়বীয়-স্বজন।
নামটাও মনে করতে পারছে না কয়েকজন।
বেঁচে থাকতে তাদের কাছে যেই ছেলেটাই ছিল গর্বের ধন।
নিখোঁজ হলেও ফাঁয়দা লুটেছে কয়েকজন আতড়বীয়স্বজন।
শুধু বাবারই আছে অবচেনতন মন।
এখনো খুঁেজ ডাকে বাঁচাধন। বাঁচাধন।
মারা গেলে একটা কথা ছিল, কবর দিয়ে দিয়েছি
মাটি চাপা দিয়ে দিয়েছি, মিশে গেছে মাটির সাথে।
মিশে গেছে জননীর বুকে।
কিন্তু সে মরে নি, মাটি চাপা পড়েনি।
ছেলের লাশটার ও দেখা মিলেনি।
শুধু এতটুকুই মনে আছে, ছেলে বের হয়েছে কাজে
বাবা-মায়ের আর্শিবাদ হাসি মুখে নিয়ে।
আর ফিরেনি, ফিরে আর আসেনি।
একটা দুটা বছর নয়।
দশ দশটা বছর।
একটা দুইটা দিন নয় তিন হাজার ছয়শত পঞ্চাশ দিন।
আর কতদিন অপেক্ষায় থাকব, আর কত দিন।
সবাই- সবাই ভূলে গেছে।
শুধু আমারই মনে আছে। আমারই মনে আছে।
ঐ ত ছেলেকে দেখছি, কি সুন্দর-সুদর্শন
বাসত্দবে নয় কল্পনায়।
আমি বাবা, আমি ভুলতে পারি না।
যখন মেয়েটাকে দেখি
যে হত আমার বউ মা
ছেলের জীবনসঙ্গীনি, অর্ধাঙ্গী
যে বাল-বাচ্চা, ছেলে-মেয়ে নিয়ে ঘুড়ে বেড়ায়।
স্বামীর সাথে আনন্দে হেঁসে যায়।
কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করি
মা ছেলেটার কথা মনে আছে কি।
যে গুম হয়ে যায়।
মেয়েটা চোখের জল ফেলে কেঁদে কেঁদে বলে
তাকে কি ভূলা যায়।
কি করব বলুন জীবনটাকে শেষ করতে নাই।
আনন্দে চোখ মুছে বলি
ছেলেটা নিখোঁজ হয় নাই, নিখোঁজ হয় নাই
এখনও বেচেঁ আছে দুজন মানুষের চোখের কিনারায়।
এখনো বেচেঁ আছি এই কথাটাই শুনার আশায়।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
প্রিয়ম আমিও আপনার সাথে এক মত , ভালো লাগলো খুব ভালো লাগলো , ধন্যবাদ |
সূর্য N/A বক্তব্যধর্মী কবিতা ভালই লাগল, তবে নিজস্ব ভাবনায় বলব বক্তব্যধর্মী কবিতাগুলো যত সংক্ষিপ্ত হয় তত বেশি ভাল লাগে।
বশির আহমেদ বর্তমান সমাজ ব্যবস্থার বাস্তব চিত্র । খুন ,জখম, গুম যা কিনা আমাদের মনকে কুড়েকুড়ে খাচ্ছে তা কবিতার ভাষায় ফুটিয়ে তুলেছেন । কবিতার শেষ দুটি চরন সমগ্র কবিতার সার সংক্ষেপ । শুভ কামনা রইল ।
ধন্যবাদ বশির অাহমেদ ভাই।
মিলন বনিক দীর্ঘ কবিতা..একটা নিরেট বাস্তবতা..সেই সাথে শেষ পন্গ্তিতাও অসাধারণ..ভালো লাগলো...
ইসমাইল বিন আবেদীন রাজনৈতিক আশ্রিত দারুন আক্ষেপের একটা কবিতা , যেন একটা দীর্ঘ শ্বাস একটা অপেক্ষা | ভালো লাগলো শুভো কামনা রইল |
মোঃ সাইফুল্লাহ খুবই ভাল । আপনাকে ধন্যবাদ।
তানি হক খুবই ভালো লাগলো ভাইয়ের কবিতাটি ..ধন্যবাদ

১৮ মার্চ - ২০১২ গল্প/কবিতা: ৩৭ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "পদত্যাগ”
কবিতার বিষয় "পদত্যাগ”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ জুন,২০২৫